মাননীয় আদালতের তদন্ত করার আদেশ দেওয়ার ধরনটা খুব স্বচ্ছ নয় : কমিশনের রিপোর্ট নিয়েও অনেক প্রশ্ন, বিশ্লেষণে সুজাত ভদ্র

সি বি আই কে দিয়ে ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে কতটা সত্য উঠে আসবে? তদন্তের নামে কিভাবে সিবিআইয়ের রাজনৈতিক ব্যবহার চলে সেটাও তো আদালত জানে, এই প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের সিবিআই দিয়ে তদন্তের নির্দেশের প্রেক্ষিতে সুজাত ভদ্রের লেখাটির পুনঃ পাঠ প্রয়োজন


না, ১১ টা পরিশিষ্ট পড়ার সুযোগ পায় নি। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ৫ বেঞ্চের 22 জুলাই আদেশ অনুসারে, বিবাদী পক্ষই পড়ার সুযোগ পাবে না, না পড়েই পক্ষে বিপক্ষে বলতে হবে! আমরা , আম জনতা তো কোন ছার ! ধর্ষণ সংক্রান্ত পরিশিষ্ট বাদ দিয়েও অন্য ১০ টা পরিশিষ্ট তো দেওয়া যেত অন্তত পক্ষে!
তবে ,২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে ( ২ মে থেকে ) হিংসা, মৃত্যু, ধর্ষণ , সম্পত্তি, বাড়িঘর ভাঙচুর ইত্যাদি গুরুতর অভিযোগ নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দ্বারা নিযুক্ত বিশেষ কমিটির ৫০ পাতার প্রতিবেদনটি মন দিয়ে পড়েছি। পাঠান্তে অনেকগুলো প্রশ্ন, সংশয় তৈরি হয়েছে। সেগুলো নিয়েই এই নিবন্ধ। তবে প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো, হত্যা হয়নি, ধর্ষণ হয় নি , ঘরবাড়ি ভাঙচুর হয়নি – এই জাতীয় কোনও বক্তব্য আমার নেই। তবু জীবন্ত বিষয় নিয়ে লেখা মানে শাঁখের করাতের মুখে পড়া। রিপোর্টকে আদ্যপান্ত সমর্থন করলে এবং ” হিমশৈলের চূড়া’ ” বললে বিজেপি মাস্টার্স ভয়েস বলে তকমা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। বিপরীতে, রিপোর্টের সমালোচনা করলেই তৃণমূলের “দালাল” বলে সামাজিক মাধ্যমে পাথর বৃষ্টির মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। সেই সমস্ত ঝুঁকির সম্ভাবনা মাথায় নিয়েই, objectivity উপর ভিত্তি করে, যতদূর নির্মোহভাবে সম্ভব রিপোর্টটির সংক্ষেপে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।
তার আগে এক ঝলকে মানবাধিকার কমিশনের জন্মলগ্নের পটভূমিটা দেখে নিই। নব্বইয়ের দশকে দেশের মানবাধিকার আন্দোলনের চাপে এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এর নতুন বৈদেশিক নীতির — improve your human rights record ,and then get aid” — চাপে পড়ে ভারত ১৯৯৩ সালে মানবাধিকার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করে ও সেই বছরেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গড়ে ওঠে। পরে পর্যায় ক্রমে নানা রাজ্যে । একটি স্বাধীন আধা বিচারবিভাগীয় সংস্থা হিসাবে গড়ে তোলার কথা বললেও কার্যত তেমন কোনো আইনি ক্ষমতা কমিশনের ছিল না ; কালক্রমে কমিশন গুলো অন্যান্য সরকারি গয়ংগচ্ছ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রের আত্মসাৎকরণ হয়েছে সম্পূর্ণ। কমিশনের গঠন কাঠামো, তার আইনি সীমাবদ্ধতা নিয়ে সেই সময়েই গোবিন্দ মুখোটি , কৃষ্ণ আয়ার ও ভারতের মানবাধিকার সংগঠনগুলো আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তারপর বছর যত এগিয়েছে, কমিশনের — জাতীয় বা রাজ্যগুলোর — সরকারি ঘেঁষা নীতি, রাষ্ট্রীয় কুকর্মের ঢাল হয়ে ওঠা ক্রমশঃ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। এমনকি কমিশনের সদস্য হিসাবে প্রাক্তন আমলা এবং পুলিশ প্রধান বা শাসক দলের পদাধিকারী , প্রিয় জনের নিয়োগ নিয়ে তুমুল সমালোচনা উঠেছিল। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের হতাশাজনক কার্যকলাপ নিয়ে রবি নায়ারের সংস্থার মোটা রিপোর্ট বা পশ্চিমবঙ্গের কমিশনের প্রথম ১০ বছরের কাজের পর্যালোচনা সংক্রান্ত এপিডিআর-র বই সেই সময়ে সাড়া জাগিয়েছিল । ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ কমিশনের সদস্য হিসাবে সদ্য প্রাক্তন এক পুলিশ প্রধানের নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করে এপিডিআর হাই কোর্টে মামলা ( W.P. no. 33283 (W) of 2013, যদিও এর ফলাফল আর জানা যায় নি) পর্যন্ত দায়ের করেছিল। পরে , কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার কমিশনের সদস্য সংখ্যা ৫ থেকে কমিয়ে ৩ করে দেয়। আর ২০১৯ সালে মোদী সরকার কমিশনের ক্ষমতা আরও হ্রাস করে, তরল করে দেয়। কাশ্মীরে তো কমিশন উঠিয়েই দিয়েছে মোদি সরকার। অন্যান্য কমিশনের হাল হকিকত একই ধরনের। তবু সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যখন জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ২০২০ সালের দিল্লিতে প্রগ্রম বা গণহত্যার উপর সাহসী প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, তখন কেন্দ্রীয় সরকার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইডি লাগিয়ে দেয়। অন্যদিকে , নন ফান্ডেড মানবাধিকার সংগঠনগুলো কমিশনকে সবসময় পবিত্র মনে করে নি কোনদিনই বা আজও করে না; নানা সময়ে কমিশনের প্রতিবেদন বা সিদ্ধান্ত কে তাদের সরাসরি নাকচ করে দেওয়ারও ভুরি ভুরি নজির আছে। পরন্তু, নানা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জরুরি সময়ে কমিশনের অস্তিত্ব পর্যন্ত নাগরিকরা টের পান না।
এই প্রেক্ষাপটটা ধান ভাঙতে শিবের গীত রচনা বলে মনে হলেও গীতটা মনে রাখাটা গুরুত্ব পূর্ণ এবং জরুরি । কি বলছে – তার থেকেও অনেকসময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় কে বলছেন ও কোন্ পরিস্থিতিতে কাকে বলছেন। ভারতের বর্তমান প্রধান বিচারপতি যেমন চমৎকার ভাবে আইনের শাসনের সঙ্গে আইনের দ্বারা শাসনের তফাৎ করেছেন, তেমনি মানবাধিকারের রাজনীতির সঙ্গে মানবাধিকারের জন্য রাজনীতির বিস্তর ফারাকের দিকে মানবাধিকারের তাত্ত্বিকরা আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়েছেন। ফলে,কোন নির্দিষ্ট প্রেক্ষিতে কোনও রাজনৈতিক দলের কোনও ধরনের মানবাধিকারের জন্য ভাবাবেগ উথলে উঠতে পারে সে সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারণা থাকাটা জরুরি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আলোচ্য প্রতিবেদন (১২.৭.২০২১) কলকাতা হাইকোর্টের ৫ বিচারপতির বেঞ্চের আদেশের ফলশ্রুতি। তবে মাননীয় আদালতের তদন্ত করার আদেশ দেওয়ার ধরনটা খুব স্বচ্ছ নয়। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটির শুনানি চলছিল। সেটা হঠাৎ করেই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৫বেঞ্চের এজলাসে শুনানির জন্য চলে যায় এবং উক্ত আদেশ হয়। আমরা সবাই জানি, ৫ বেঞ্চ বিশেষ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে (নারদা মামলায় জামিন দেওয়ার প্রশ্নে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মতভেদ) মীমাংসার জন্য আদালতের প্রচলিত প্রশাসনিক নিয়ম ভেঙে গঠিত হয়েছিল। অর্থাৎ সোজা কথায়, অনেক আইন বিশেষজ্ঞের মতে, তৃতীয় বেঞ্চে না পাঠিয়ে ৫ জনের বেঞ্চ গঠনই সঠিক আইনি পদ্ধতি ছিল না।তখন এক জন সিটিং বিচারপতি পরোক্ষে আপত্তি জানিয়েছিলেন ।আবার, ক’ দিন আগে অন্য ইস্যু তে আদালতে বেঞ্চ বদল প্রসঙ্গে একই আইনি jurisdiction /এক্তিয়ারের কথা তুলেছেন একজন সিটিং বিচারপতি। অর্থাৎ, শুধুমাত্র নারদা মামলায় ধৃত চারজন “হেভিওয়েট” অভিযুক্তদের জামিনের বিষয়টি বিশেষ ৫ বেঞ্চের একমাত্র ইস্যু/ determination ছিল। অন্য কোনো ইস্যু সেই কক্ষে বিচার্য হতেই পারে না।তবু হলো. আদেশ বেরিয়ে গেলো। NHRC তাদের দায়িত্বও পালন করে রিপোর্ট জমা দিল। আবার ২২ জুলাই দেখলাম, ৫ বেঞ্চ সরকারপক্ষের আবেদন সত্তেও পরিশিষ্ট গুলো দিতে রাজি হলেন না।
বস্তুত, কমিশনের রিপোর্টটি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে চার্জশীটের মত। সাধারণ ফৌজদারি আইন অনুযায়ী , অভিযুক্ত পক্ষ চার্জশিটের কপি পাবেই। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ আদালত দিতে বাধ্য এবং তারজন্য সব নথি বিবাদী পক্ষ পাবে। এক্ষেত্রে হলো না। মাননীয় আদালত কি বিস্মৃত হয়েছেন প্রায় এক শতাব্দী আগে, ১৯২৪ সালে লর্ড প্রধান বিচারপতি গর্ডন হেওয়ার্ট – এর কালজয়ী পর্যবেক্ষণটিকে , যা আজ ন্যায়বিচার ব্যবস্থার অন্যতম দীপশিখা — ন্যায় বিচার দিলে শুধু হবে না, দেওয়া হয়েছে তা প্রতিফলিত করতে হবে প্রক্রিয়াতে [ “Justice should not only be done, but should manifestly and undoubtedly be seen to be done”] ।
বহু বছর আগে, ১৯৯৬- ৯৭ সালে, পাঞ্জাবের কুখ্যাত “গণসমাধি” মামলায় সুপ্রিম কোর্ট অনুচ্ছেদ ৩২ মোতাবেক জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপর ন্যস্ত করেন অনুসন্ধান করার জন্য , আইনি পরিভাষায় যাকে “সুই জেনেরিস” (sui generis) বলে । হাই কোর্টের এই এক্তিয়ার আছে কিনা তা এক জটিল আইনি পদ্ধতি সংক্রান্ত প্রশ্ন।
Technicalities, কোর্টের ক্যাপ্রিস ও ভাগারিজকে দূরে সরিয়ে রেখে যদি আমরা ধরেই নি যে , জীবনের অধিকার রক্ষার প্রশ্নে এবং ভবিষ্যতে এরকম নির্বাচনী হিংসায় আর কেউ প্রাণ না হারান, ধর্ষিতা না হোন, তার জন্য হাই কোর্ট অনুচ্ছেদ ২২৬ অনুসারে হস্তক্ষেপ করেছেন, তাহলে তাকে স্বাগত জানানো উচিত নাগরিকের।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টটি বহু দিক বেশ কৌতুহলোদ্দীপক। প্রথমত, রিপোর্টের ভাষা। মার কাট কাট ইংরেজিতে তুলোধোনা করা হয়েছে সদ্য নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে। যত না আধা বিচার বিভাগীয় সংস্থার থেকে সংযম ও মর্যাদাপূর্ণ ভাষা প্রত্যাশা করা উচিত, তার থেকে ঢের ঢের বেশি আমাদের শোনা জানাতে অভ্যস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে। এও বাহ্য। সরকারপক্ষ ও শাসক দল তো রিপোর্টকে প্রত্যাশা মতই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যা দিয়েছে । কিন্তু একটি গুরুতর অভিযোগ আদালতকে জানিয়েছে; বাংলা ভাষায় অভিযোগের সঙ্গে ইংরেজি অনুবাদের নাকি বহু ক্ষেত্রে মিল নেই। দ্বিতীয়ত, অনুসন্ধানের ফলাফল বোঝাতে গিয়ে এবং ভাষার কেরামতি দেখাতে গিয়ে রিপোর্টটি তাল লয় হারিয়ে ফেলে ” final thoughts”(bunch of thoughts – এর আদলে?)- এর পংক্তিটি তে: রবীন্দ্রনাথের চিত্ত যেথা ভয়শূন্য ইত্যাদি উল্লেখ করার পর বলা হলো:. [ শ্রবণ করুন] ” … thousands of its citizens have been subjected to murder,rape, displacement and intimidation ,etc in last couple of months” (p. 49)অর্থাৎ দু মাসে পশ্চিমবাংলায় হাজার হাজার [ রাজনৈতিক] হত্যা, হাজার হাজার ধর্ষণ ….ইত্যাদি ঘটেছে ! কিন্তু আশ্চর্য, এমন বচন নিজেদের পুরো রিপোর্টের কোথায় বিন্দুমাত্র উল্লেখ নেই ; এমনকি বিজেপির রাজ্য প্রধানের ২১ জুলাইয়ের বক্তব্যেও নেই; আছে ৩৪ জন দলীয় কর্মীর মৃত্যু, তিনজন ধর্ষিতার পুলিশে অভিযোগ করার সাহসী ঘটনা ও প্রায় ২৯ মহিলার ভয়ে অভিযোগটুকু না করতে পারার বিষয়টি। এই সংখ্যা টাই তো যে কোনো গণতান্ত্রিক কাঠামোয় ভয়ানক,। “আক্রান্ত” পার্টিও যেটা দাবি করলো না সেটা যদি ” নিরপেক্ষ এবং সত্য অনুসন্ধানী সংস্থা” করে, ” হাজার হাজার” বলে অম্লান বদনে লিখে রাজ্যের গণতন্ত্রের হাল ভয়ানক ( যেন যথাযথ চিত্র তুলে ধরলে ভয়ানক বোঝানো যাবে না!). বোঝাতে কোর্টে জমা দেয়, কোর্টকে আদালত বান্ধব হিসাবে ভুলপথে পরিচালিত করে তাহলে তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই তো প্রশ্ন উঠতে বাধ্য । না উঠাতাই আশ্চর্যের হবে।
তৃতীয়ত, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি নিয়ে মনে প্রশ্ন জাগাবেই । টানা ২০ দিন ধরে তদন্ত কমিটি দুভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছে বলে জানিয়েছে: ১. নানা জেলায় প্রকাশ্যে শিবির খোলা হয়েছিল মানুষের বয়ান , অভিযোগ নথিভুক্ত করার জন্য; সেই।মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। ২. সম্পূর্ণ গোপনে , ভ্রমণ সূচি না জানিয়ে, স্থান না জানিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে(পৃ. ৭- ৮)। এই পদ্ধতি অত্যন্ত অস্বচ্ছ , ফলে তথ্য সংগ্রহে চূড়ান্ত infirmities থাকা সম্ভব । মনে পড়ে যায়, অষ্টাদশ শতাব্দীর দার্শনিক তথা Panopticon – এর প্রবক্তা জেরেমি বেন্থামের এক অবিস্মরণীয় পর্যবেক্ষণকে : ” in the darkness of secrecy, sinister intent and evil in every shape, have full swing .” ; প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কমিটি নিজেই জানিয়েছে, ধর্ষণ সংক্রান্ত পরিশিষ্ট ও ফাইন্ডিংস কমিটির নয়, কমিটির অন্যতম সদস্য, জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যের আলাদা সময়ে আলাদা একক তদন্তের রিপোর্ট। সেটা কমিটি যাচাই না করেই টিম রিপোর্টের অংশ হিসাবে যুক্ত করেছে। দুটো প্রতিবেদনেই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ভয় ও আতঙ্কের বাতাবরণ কমিটির ও সদস্যা সর্বত্র লক্ষ করেছেন ( পৃ ১৮ – ২০)। লোকে শুধু নয়, আক্রান্ত নারী পুরুষ ভয়ে শিবিরে এসেও মুখ খুলছেন না, কোনো নেতাকে দায়ি করছেন না। ফলে, আমাদের ধরে নিতেই হবে, গুন্ডা, দুষ্কৃতী নেতা মন্ত্রীর তালিকা ,বা দোষী পুলিশের তালিকা( যা পরিশিষ্ট এ রয়েছে) গোপনে সংগৃহীত।! কারা দিয়েছেন ? গ্রামবাসী? ভিক্টিম? বিরোধী রাজনৈতিক দল? বিমূর্তভাবেও তার কোনও উল্লেখ নেই । পাশাপাশি,কমিশনের সর্বসাধারণের জন্য প্রকাশ্য বিজ্ঞপ্তির বয়ানটি বিস্ময়কর। অভিযোগ চাওয়া বা নথি জমা দেওয়ার সময় সবসময বলা হয় alleged incidents বা অভিযোগ উঠা ঘটনাসমূহ। যেহেতু সবকিছুই তদন্তের পর্যায়ে আছে। সিদ্ধান্তে কমিটি আসে নি। রিপোর্টের দু জাগায় alleged থাকলেও গণ বিজ্ঞপ্তিতে তার কোনো চিহ্ন মাত্র নেই। ২৯ জুন কোথায় বসবে কমিটি, আসতে না পারলে নির্যাতিত কোথায় অভিযোগ বা/এবং নথি পাঠাতে পারবেন ইত্যাদি এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা ছিল। শিরোনামে ছিল.[ ভাষা শুনুন] ” NHRC তদন্ত কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে যে রাজনৈতিক অত্যাচার হয়েছে…”। অর্থাৎ অত্যাচার হয়েছে এই সিদ্ধান্তে কমিটি ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে। পরে অভিযোগ , নথি সংগ্রহ করার জন্য জন শিবিরের আয়োজন করছে! ন্যায়বিচারের আব্রু টুকু ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হলো।
জোরালো প্রশ্ন উঠবেই, তাহলে কি নির্বাচন – উত্তর পশ্চিমবঙ্গে হিংসা , হত্যা হয় নি? আমরা জানি হয়েছে এবং সেটা খুবই নিন্দনীয়। চাপানো উতর চলেছিল শাসক পার্টির সঙ্গে বিরোধীদের। এটা সাধারণ সর্বজনগ্রাহ্য সত্য। কিন্তু গোটা বিষয়টা নিয়ে যখন নিরপেক্ষ তদন্ত চলছে ,দোষী সাব্যস্ত হবে, নানা সুপারিশ হবে, এবং তার জন্যই তো তথ্য চাওয়া হচ্ছে তখন সিদ্ধান্ত আগাম জানিয়ে দিলে তা পূর্ব সিদ্ধান্ত বলে মনে হবেই, ,তদন্ত প্রক্রিয়াটাই তখন vitiate বা বিষাক্ত হয়ে উঠে।






Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!