স্বামীজীর চোখে স্বাধীনতা:- কী পেয়েছি ? কেন পাইনি?

সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়

আজ স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু কথা বলতে ইচ্ছে করছে। গতকালই আমরা স্বাধীনতা দিবস পালন করেছি এবং একইসঙ্গে পালন করেছি আমরা আমাদের ভারত দ্বিখণ্ডিত হওয়ার দিবস। আমি দুটো ভাবেই দেখি। আরো একটা জিনিস আমি দেখি আমাদের লড়াইয়ের দিবস। যে লড়াইটা আমাদের শুরু হয়েছিল এই ভারতের রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে ধীরে ধীরে মানুষের কাছে তার সামাজিক স্বাধীনতা, তার মানসিক স্বাধীনতা, তার আধ্যাত্মিক স্বাধীনতা, তার সৃজনাত্মক স্বাধীনতার দিকে আমরা দেশটাকে কতখানি স্বাধীন করতে পারলাম সেই সংগ্রাম সেই লড়াই চলছে ৭৫ বছর ধরে। ফলে এটা একটা আমাদের আত্মবিশ্লেষণের মুহূর্ত। আমরা কিভাবে কতটা এগোতে পারলাম। নিজেদের দিকে তাকাতে গেলে একটা আয়না লাগে। সবচেয়ে ভালো আয়না আমাদের সামনে ধ্রুপদী সোনা। যে আয়নাকে আমরা বলতে পারি স্বামী বিবেকানন্দ। নিরপেক্ষ আলোচনা করতে গেলে এই একটা শব্দ আমি বলে ফেললাম নিরপেক্ষ আদেও বিবেকানন্দকে নিয়ে অনেকে বলবেন তিনি আবার নিরপেক্ষ নাকি? লোকটা ভদ্রলোক কেউ আবার মনীষী বলেন আবার অনেকে ভদ্রলোকও বলেন। যারা তাকে মানেন তারা তাকে মনীষী দেব তুল্য বলে মনে করেন। আর যারা মানেন না তারা ভদ্রলোক বলে থাকেন বা একজন ঐতিহাসিক বলেন। তিনি মানব কি মহামানব এইসব তর্ক-বিতর্কের মধ্যে আমরা যাচ্ছি না। স্বামী বিবেকানন্দকে আমরা কতটা এই আয়না হিসেবে ভাবতে পারি। কেন তার মৃত্যুর ১২০বছর পর তাকেই আমরা মানদন্ড হিসাবে ভাববো। আর ৭৫ বছরের স্বাধীনতার প্রাপ্তি আর প্রত্যাশার বিচার করার ক্ষেত্রে কেন স্বামীজীর ভাবনা এবং দর্শনকে আমরা মানবো বা গ্রহণ করবো। এই ভাবনা তিনটে আমাদের সামনে থাকা দরকার। প্রথমত হুইস্বামী। স্বামী বিবেকানন্দকে কেউ কেউ হিন্দু মঙ্ক বলেন। নিজেও তিনি এটা অনেক জায়গায় বলেছেন। আর আমি অন্তত যে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাকে দেখি সেটা হচ্ছে একজন সমাজতাত্ত্বিক মানুষ হিসাবে দেখি। যে সমস্ত এখনো পর্যন্ত ঠিক ম্যাচিওরড হয়ে ওঠেনি। অর্থাৎ সমাজের একক ব্যক্তি, সেই ব্যক্তির বিকাশ তার জন্য সমাজ। সেই সমাজকে ভাবা হয় সমাজতত্ত্বের বিষয় হিসাবে। কিন্তু ব্যক্তি নিজের বিকাশের সমন্বিত সত্তা সমাজ সত্তা এবং ব্যক্তিসত্তা সম্মানিত বিকাশের মধ্যে থেকে যে ব্যক্তি সত্তা। অন্তত আল্টিমেট এন্ড। তাকে নিয়ে বিচার করবার জন্য যে ম্যাচুরিটি সেটার এখনো পরিণতি আসেনি। আমরা মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যদি দেখি মার্কসবাদের উত্তর মার্কস বাদের যে আলোচনা আমরা পেয়েছি বা তারও পরে আমরা উত্তর মার্কসবাদের যে আলোচনা আমরা সমাজতত্ত্বের ক্ষেত্রে পেয়ে চলেছি এখনো পর্যন্ত আমি নাম আর ড্রপ করলাম না। কাল মার্কস থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় মনীষীদের নাম অনেক দর্শন আলোচনার জায়গা এটা নয়। আমরা সংক্ষেপে জানতে চাই যে, আমরা তো অনেক দার্শনিক পেলাম আর অনেক দর্শন পেলাম। আমরা পেলাম টা কি? আমাদের দর্শন বিকাশের জন্য। আমি একটা মজার কথা স্বামীজীর কথাতেই বলি। তিনি সমাজতাত্ত্বিক ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে কখনো ভাবেননি। তিনি একজন দার্শনিক হিসেবেও নিজেকে ভাবেননি। তিনি কোন ধর্মমত প্রচার করতে আসেননি। তিনি একটা ভাবনা থেকে যে মানুষের ভালো হবে, জনকল্যাণের দৃষ্টি থেকে কি হওয়া উচিত এটা তিনি ভেবেছিলেন।তার সমাজতাত্ত্বিক ভাবনাটার মধ্যে বেসিক্যালি একটা কথা তিনি বলেছিলেন যে I am a socialist. এইভাবে নয় যে সোশ্যালিজমের মধ্যে কোন দোষ ত্রুটি নেই। তার নিজের কথায় I am a socialist not because I think it is a perfect system. But half a loaf is better than no great. অর্থাৎ না খাওয়ার চেয়ে আধ পেটা খাওয়া ভালো। অর্থাৎ বর্তমানে যে সমাজ ব্যবস্থা আছে সেই সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে যে ভাবনা চিন্তার মধ্যে আমরা মানুষের মুক্তি সাধনা করতে পারি তাতে কিন্তু সোশালিজম টাই বেস্ট।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!