আজও সত্যিই নারী মুক্ত কতখানি?
নারী মুক্তি ১
যেদিন থেকে আমিত্ববোধ মানুষকে গোষ্ঠীর থেকে আলাদা করে দিল এবং বৃহত্তর গোষ্ঠী থেকে প্রথমে ভেঙে ছোট গোষ্ঠী হলো, কারণ সবাই এককভাবে নিজেকে সাফল্যমণ্ডিত হতে পারেবে বলে মনে করত না আত্মবিশ্বাস ছিল না। তাই সবাই মনে করল ৩০জনে মিলে একসাথে ভাগ না করে আমরা ছোট গোষ্ঠী করি তিনজনে মিলে। চল আমরা তিনজনে মিলে ভাগ করে খাবো। এইভাবে তিনজনে মিলে গোষ্ঠীগুলো দশটা গোষ্ঠী হয়ে গেল। এই দশটা গোষ্ঠী তখন পরস্পরের মধ্যে যারা এক সময় একসঙ্গে লড়াই করতে যেত ৩০ জন এই ৩০টা লোক যখন ভাগাভাগি হয়ে দশটা গোষ্ঠী হয়ে গেল তখন একে অপরের শত্রু হয়ে গেল। ফলে তাদের মধ্যে শুরু হয়ে গেল এই এলাকা আমার, এই তিনজনের নেতা আমি, আমি রাজা, ও মন্ত্রী, এ সেনাপতি। এই এলাকা আমার এই রাজত্ব আমার। এখানে ঢুকলে কিন্তু মেরে দেবো। এই করে ওই ৩০ জন টুকরো টুকরো হয়ে গিয়ে গোটা এলাকাটাকে নিজেদের মতো করে ভাগাভাগি করে ওই তিনজনে মিলে থাকবে বলে ঠিক করলো। রাজা মন্ত্রী সেনাপতি তাদের জন্মদাতা ,সেনাপতি বা যারা বশ্যতা স্বীকার করে তাদের নিয়ে রাজত্ব তৈরি হলো। টুকটুক করতে করতে চলছিল। ওই তিনজনের মধ্যে কিন্তু তখন তেরোস্পর্শ চলছে। সবই একসাথে খাওয়া হচ্ছে। ওই একটা বউ তিনজনেরই। একটা বাড়ি ও তিনজনের, একটা রাজত্ব তিনজনের। কো-অপারেটিভ সিস্টেমে চলছিল। এটা আমাদের ইতিহাস বলছে আমি বলছি না। তারপর মানুষ একক হলো। আমি একা যা সংসার করবো অর্থাৎ এই মেয়েটি আমার এই বাড়িটি আমার তাতে তিনজন থাকবে আগে ৩০ জন থাকতো। এই ঘরটা আমার ,এই জামাটা আমার ,এই শিকারটা আমার। এককভাবে রাজত্ব ভেঙে গেল রাজা তখনো থাকে, রাজার সিংহাসন দখল করতে হবে। সেনাপতি মনে করলো মন্ত্রীকে মারবো। মন্ত্রী মনে করলো রাজাকে মারবো। ওই সিংহাসনটা আমার দরকার নিজেদের মধ্যে খেওখেয়ি বেঁধে গেল। চলতে থাকলেও সেই থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ একক ।আর সেদিন থেকে এই গোরু জরু জরু মানে বউ বা স্ত্রীলোক, গোরু মানে সবচাইতে লাভবান সম্পদ। যার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এমন কি ফেলে দেওয়া উদ্দিষ্ট বিক্রি হয়। তার নাদাও বিক্রি হয় দুধও বিক্রি হয়। মরে গেলেও তার চামড়া বিক্রি হয়। তাই এই দুটো কাউকে দেওয়া যাবে না ভাই। আর জমি, জমি দখল করো, নারী দখল করো আর গোরু দখলে রাখো। ব্রাহ্মণকে খুশি করার জন্য তিনটে দেওয়া যেতে পারে ।কারণ ব্রাহ্মণ হচ্ছে ক্ষমতা। লেখা রয়েছে গোরু দান করা যায়, বউ ও দান করা যায়, জমিও দান করা যায়। এই তিনটেই দান করা যায় ব্রাহ্মণকে। কারা বললো? ব্রাহ্মণরা। ব্রাহ্মণ রাজার সঙ্গে ঠিক করে নিল। ক্ষমতা চালানোর জন্য রাজা মনে করল আমার একটা সাপোর্ট স্ট্যান্ডার্ড লোক দরকার। সাপোর্ট স্ট্যান্ডার্ড লোক জ্ঞানীগুণী থাকলে আমার রাজত্ব চালাতে সুবিধা হবে। কিন্তু রাজত্বটা আমি চালাবো। প্রধান সেনাপতি আমি থাকবো রাজকোষটা আমার হাতে থাকবে। লুটপাট করে যা পাবো টাকা পয়সা আমার থাকবে। কিন্তু পাবলিক যাতে আমার বিরুদ্ধে কোন উক্তি না করে যাদেরকে একটু ভালো করে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে পাবলিক তাকে আমার করে নাও। পাবলিক কাকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছেন? পাবলিক জ্ঞানকে শ্রদ্ধা করে। জ্ঞানবানকে শ্রদ্ধা করে। বুদ্ধিজীবীকে শ্রদ্ধা করে। বুদ্ধিজীবীকে শ্রদ্ধা করতে গিয়ে কি করছে? যারা জ্ঞানী শাস্ত্রক্ষম তাদেরকে নাম দেয়া হলো ব্রাহ্মণ। সেখানে বাওনের ছেলে বাওন নয়। পরে বাওনরা মনে করল আমার এই ক্ষমতাটা তাহলে তো অন্য লোকরা পেয়ে যাবে। নিজেরা একটা রুলস করে দিল আমার ছেলে ছাড়া এটা কেউ হতে পারে না। আমি যে ক্ষমতাটা অর্জন করেছিলাম শাস্ত্র পড়ে। চন্ডালের ছেলে ও শাস্ত্র পড়ে ব্রাহ্মণ হতে পারতো। ক্ষত্রিয়ের ছেলেও শাস্ত্র পড়ে ব্রাহ্মণ হতে পারতো। এটা হতো, বিশ্বামিত্র মুনি ক্ষত্রিয় ছিলেন, পরশুরাম চন্ডাল ছিলেন তারা সব বড় বড় মুনি-ঋষি হয়েছেন। তখন সমাজটা আরেকটু দখলদারির মধ্যে চলে গেল। সে বলল আমার ক্ষমতা আছে আমি একসঙ্গে ৫০ টা মেয়ে রাখতে পারি, সবাই আমার বউ, উপপত্নী। আমার ক্ষমতা আছে আমি পঞ্চাশটা রাজত্ব জয় করে সম্রাট হবো এর ফলে সম্রাট শব্দটা চালু হল। আমার ক্ষমতা আছে আমি ৫০ টা বাওনকে একসাথে খাওয়াতে পারি। আমি রাজাধিরাজ পদবী নেবো। আর ৫০ বাউন কি বলবে? সব পঞ্চাশ গ্রামে গিয়ে বলবে একটা গ্রাম ছিল একটা রাজত্বের মতো। চার-পাঁচটা গ্রাম নিয়েছিল একটা রাজত্ব। এক একটা গ্রামের জন্য তারা সবাই যেত বৃষ্টি হবে তো? ফসল ফলবে তো? আমার বাচ্চাটা বাঁচবে তো? কার কাছে পরামর্শ নিতে যেত ?ওই বুদ্ধিজীবী ব্রাহ্মণ এর কাছে। ওই বুদ্ধিজীবী বাওনটাকে টুক করে বললো রাজপ্রাসাদে আপনি আসবেন প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলায় নর্তকী নাচবে ।আপনিও একটু নর্তকী উপভোগ করবেন। সঙ্গে আপনার সাথে রাবরি ফ্রি। শুধু আপনি রাজ প্রশস্তি গাইবেন। গ্রামে গিয়ে সকালবেলায় বলবেন রাজার তুলনা নাই। রাজার বিরুদ্ধে কোন কথা কইবেন না। ব্রাহ্মণ মহাশয় আপনাকে কিন্তু এই জন্য আমি নর্তকী ,ক্ষীর, রাববি এটা ফ্রিতে দিলাম। পরের দিন আপনি স্তুতি গাইলে রাজত্ব করতে আমার সুবিধা হবে। ব্রাহ্মণের পলিটিক্সটা শুরু হল ।এইভাবে রাজার সাথে সমাজের পলিটিক্সটা হয়ে গেল মেয়েরা হল সেই পলিটিক্সের শিকার। গরু, জরু ,জমির মতন মেয়েরা হয়ে গেল ভোগ দখলের বস্তু। গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হল অন্য পুরুষের হাত ছোঁয়া ।মানে তোমায় কিন্তু মৃত্যু ছাড়া কিছু করার নেই। সমাজ তোমাকে হয় পুড়িয়ে মারবে আর নয় মেরে ফেলে দেবে। তুমি কুলটা।তার কারণ একমাত্র আমিই তোমায় ভোগ করবো। আর আমি যদি ব্রাহ্মণ হই তাহলে প্রবলেম নেই। আমি ৫০ জনকে ভোগ করবো। কিন্তু তুমি ৫০ টা ব্রাহ্মণকে স্বীকার করবে না স্বামী হিসেবে।