সরকারি প্রকল্পেও ন্যায্য অধিকার পাচ্ছে না এদেশে শ্রমিকরা
, এই রাজ্যে ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি:দীপঙ্কর ভট্টাচার্য
গোটা দেশজুড়ে প্রথমে কেন্দ্রীয় এজেন্সির মাধ্যমে হামলা চালিয়ে তারপরে শাহিনবাগে আধাসেনা নামিয়ে বা জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪৪ ধারা জারি করে পিএফআই-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। এটা আসলে ব্যাপক মুসলিম জনগণকে সন্ত্রস্ত করার অপচেষ্টা। একদিকে পিএফআই-কে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে অথচ আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠন মুসলিম জনগণের ওপর গণহত্যা সংঘঠিত করার হুমকি দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে দেশে দুইরকম আইন আছে। আমরা গণতন্ত্রে সবার সমান অধিকার সুনিশ্চিত করার দাবি করছি।
পশ্চিমবঙ্গে অভূতপূর্ব দুর্নীতির বিষয়গুলো সামনে আসছে। তার বিরুদ্ধে মানুষের যে দুর্নীতি মুক্ত সমাজের দাবি, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু এই পরিস্থিতির সুযোগে বিজেপি ঘোলাজলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে। দুর্নীতি বিরোধী লড়াইয়ের নামে রাজ্যজুড়ে তাদের নৈরাজ্য তৈরির অপচেষ্টা আমরা দেখলাম। তৃণমূলের অপশাসনের জবাব বিজেপির নৈরাজ্য হতে পারেনা। তৃণমূলের অপশাসনের জবাব দিতে হবে সংগঠিত গণ আন্দোলনের মাধ্যমে। এই গণ আন্দোলনের মাধ্যমেই বামপন্থীরা এরাজ্যে আবার সামনের সারিতে উঠে আসবে এটা আমরা আশা রাখি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে প্রশ্নটা শুধু দুর্নীতির নয়। মূল প্রশ্নটা চাকরির। আজ আদালতকে ত্রাতা হিসাবে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এরাজ্যে লড়াইটা চালাচ্ছেন এরাজ্যের নিয়োগপ্রার্থীরা। এই পর্যন্ত যেসব দুর্নীতির কথা সামনে এসেছে এটা তাদেরই কৃতিত্ব। তাদের নিয়োগের দাবিটাই এখনো প্রধান। তাদের দ্রুত নিয়োগের দাবি আমরা জানাচ্ছি।
বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পে ব্যাপক সংখ্যক প্রকল্প শ্রমিক কাজ করছেন। শুধু বাংলাতেই নয়, গোটা দেশজুড়েই। সরকারের অন্যতম খুঁটি তারা। কিন্তু তারা কোনোরকম সরকারী স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। আমরা দাবি করছি অবিলম্বে তাদের সরকারী স্বীকৃতি দিতে হবে এবং ন্যায্য অধিকার ও ন্যায্য মজুরি সুনিশ্চিত করতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপক সংখ্যক মনরেগা প্রকল্পের শ্রমিক কাজ করেও দীর্ঘদিন ধরে মজুরী থেকে বঞ্চিত। ট্রান্সপোর্ট শ্রমিকরাও মজুরি পাচ্ছেন না। এইসময়ে একদিকে কাজের অধিকারের প্রশ্ন, অপরদিকে কাজের ন্যায্য দামের প্রশ্ন এটাই এখন আমাদের কাছে আসল প্রশ্ন। মানুষের জীবন-জীবিকার দাবিই মূল দাবি।
গত ২০১৮’র পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সন্ত্রাস আমরা দেখেছি। আবার একটা পঞ্চায়েত নির্বাচন আসছে। আমরা দাবি করছি এই নির্বাচন সন্ত্রাসমুক্ত করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যখন বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করলেন, সেই গণরায়কে উপেক্ষা করে নির্বাচন পরবর্তী যে সন্ত্রাস তার বিরুদ্ধে আমরাই প্রথম রাস্তায় নেমেছিলাম।
একটা নতুন পরিবর্তন বাংলায় হচ্ছে, যেখানে ব্যাপক সাধারণ মানুষ আন্দোলনমুখী হচ্ছেন, আরেকদিকে বিজেপি প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। এই সময়ে ব্যাপক সংগ্রামী বামপন্থী ঐক্যই একদিকে অপশাসন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অপরদিকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে রুখে দিতে পারে । আমরা সমস্ত বামপন্থী দল ও ব্যক্তিবর্গকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বাণ জানাচ্ছি। আশা রাখি সমস্ত বামপন্থী শক্তিরাও এই আহ্বানে সাড়া দেবেন।
গোটা দেশেই বিরোধী ঐক্যের একটা প্রচেষ্টা চলছে। তাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু মমতা ব্যানার্জী মাঝে মাঝে আরএসএস কে বিজেপির থেকে আলাদা করছেন, আবার কখনো মোদী-শাহকে আলাদা করছেন। কিন্তু এই পুরোটাই একসঙ্গে কাজ করে, দেশের মানুষের কাছে এগুলোর কোনো ফারাক নেই। এই প্রেক্ষিতে আমরা বামপন্থীরা যারা মতাদর্শগতভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে তাদের মতাদর্শগত ঐক্যকে সুদৃঢ় করতে হবে। সেটাই ব্যাপক বিরোধী ঐক্যকে ত্বরান্বিত করবে।
আগামী ১৪-১৫ নভেম্বর এই রাজ্যের চন্দননগরে আমাদের সারাভারত ক্ষেতমজুর ও গ্রামীণ মজুর সমিতির সর্বভারতীয় সম্মেলন হতে চলেছে। গ্রামীণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন-জীবিকার দাবিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই সম্মেলনকে সফল করতে আপনাদের কাছে আমরা আহ্বাণ রাখছি।