নুপুর শর্মার একটি মন্তব্যে মুসলিম বিশ্ব উত্তাল হয়ে গেল কেন?

সাদাত হোসাইন

বিজেপির মুখপাত্র নুপুর শর্মা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে এমন একটি মন্তব্য করেছে, যে মন্তব্যের কারণে গোটা মুসলিম বিশ্ব উত্তাল হয়ে উঠেছে। নুপুর শর্মারা জানে না যে মুসলমানদের হৃদয়ে নবীর স্থান কোথায়? মুসলমানরা নিজেদের জীবনের চেয়ে নবিকে অনেক বেশি ভালোবাসে। এই ভালোবাসা না থাকলে নিজেকে মুমিন বলে দাবি করা যায় না। কারণ কোরআনে আল্লাহ বলেছেন النبي اولى بالمؤمنين من انفسهم অর্থাৎ মুমিনদের কাছে নবী তাদের জীবনের থেকে অধিক প্রিয়। অন্যদিকে হাদিসে নবী সা বলেছেন لا يؤمن احدكم حتى اكون احب اليه من والده وولده والناس اجمعين অর্থাৎ ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ নিজেকে মমিন বলে দাবি করতে পারবে না, যতক্ষণ না সে নিজের পিতা মাতা এবং পৃথিবীর সবার চেয়ে নবিকে বেশি ভালবাসতে পারবে। অতএব বোঝা গেল, যারা নিজেকে মমিন বলে দাবি করে তারা অবশ্যই নবীকে নিজের জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসে।
ভারতে অসংখ্যবার দাঙ্গা হয়েছে, তাতে হাজার হাজার মুসলিম এর জীবন গিয়েছে ,মুসলিমদের বাড়ি ঘরের উপরে বুলডোজার চালিয়ে দেওয়া হয়েছে, মুসলিমদের পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার বহু ঘটনা ভারতে ঘটেছে, অনেকগুলি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে, অনেক মসজিদে নামাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তা সত্ত্বেও মুসলিমরা অনেক কিছুই সহ্য করে নিয়েছে, কিন্তু যখন নবীর সম্মান এর উপরে আঘাত এসেছে তখন সেটা সহ্য করা মুসলিমদের দ্বারা সম্ভব হয়নি। কোন মুসলিম সেটা সহ্য করতেও পারেনা।
নুপুর শর্মা বিশ্ব নবীর বিয়ে সংক্রান্ত যে প্রশ্ন তুলে ন্যক্কারজনক মন্তব্য করেছে সে বিষয়ে অধিকাংশ অমুসলিম এমনকি বহু মুসলিমের ও স্পষ্ট ধারণা নেই। বিশ্ব নবী আল্লাহর নির্দেশে একাধিক বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁর প্রতিটি বিয়ের পিছনে ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, কারণ রয়েছে। জৈবিক চাহিদা মেটানো তাঁর বিয়ের উদ্দেশ্য ছিল না। জৈবিক চাহিদার কারণে যদি তিনি একাধিক বিয়ে করতেন তাহলে 25 বছর বয়সে 40 বছরের পৌড়া রমণী খাদিজা কে বিয়ে করতেন না। খাদিজার মৃত্যুর সময় পর্যন্ত অর্থাৎ নবীজির জীবনের 50 বছর পর্যন্ত তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি। খাদিজার ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল 65 বছর। ৬৫ বছরের রমণীকে নিয়ে নবীজি জীবনের পঞ্চাশটি বসন্ত পার করে কেন অনেকগুলি বিয়ে করেছিলেন তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া এখানে সম্ভব নয়। শুধুমাত্র হযরত আয়েশার বিয়ের বয়স নিয়ে কিছু আলোচনা করছি।
পৃথিবীতে সবাই সমান প্রতিভা নিয়ে জন্মায় না। এবং কোন যোগ্যতায় পৌঁছানোর জন্য সবার সমান বয়সের প্রয়োজন হয় না, তার বহু উদাহরণ আমরা দেখে আসছি। সম্প্রতি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান একটি আট বছর বয়সী ছেলে সুবর্ণ বারী পৃথিবীর বিখ্যাত বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রিত শিক্ষক হিসাবে শিক্ষকতা করে দেখিয়ে দিয়েছে বিরল প্রতিভা আল্লাহ তাকে কেমন দান করেছেন। যোগ্যতায় সে পৃথিবীর বহু বয়স্ক মানুষ কে টেক্কা দিয়েছে। আমাদের দেশে সাধারন ভাবে বাচ্চারা 16 বছরে যখন মাধ্যমিক পাশ করে ওই একই বয়সে অনেকে মাস্টার ডিগ্রী কমপ্লিট করে পিএইচডি পর্যন্ত করে নিয়েছে! এই বিশেষ প্রতিভা এবং যোগ্যতা আল্লাহরই দেয়া। তেমনিভাবে হযরত আয়েশা সিদ্দিকাকে আল্লাহ তাআলা বিরল প্রতিভা, জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা দান করেছিলেন। কোরআন এবং হাদিসের অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করে তিনি সাহাবীদের ভিতরে মুহাদ্দিস হিসেবে সম্মান অর্জন করেছিলেন। হাজার হাজার হাদিস তাঁর মুখস্ত ছিল। অল্প বয়সেই তাঁরমধ্যে আল্লাহ তাআলা অনেক বেশি যোগ্যতা দিয়েছিলেন। তখনকার দিনে অল্প বয়সেই মেয়েরা বিয়ের যোগ্য বলে বিবেচিত হতো। ছয় বছর বয়সে আল্লাহর নির্দেশ মতো রাসুলের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হলেও তিনি 9 বছর বয়স থেকে সংসার জীবন যাপন করেছিলেন। অর্থাৎ তিনি বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন নয় বছর বয়সে। সেই সময়কার পৃথিবীতে এবং আরব সমাজে এটা সাধারন ব্যাপার ছিল। সেকারণে আরবে তাঁর বিরোধীরাও এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন তোলেনি।
দেড় হাজার বছর আগের নবীজির সঙ্গে কম বয়সি আয়েশার বিয়ে নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তাঁদেরকে আমি প্রশ্ন করতে চাই তাঁরা কি জানেন, মাত্র 100 বছর আগে আমাদের দেশের মনীষীরা কত বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ে করেছিলেন? কয়েকজন মনীষীর বিয়ের তথ্য আমি আপনাদেরকে জানাতে চাই।
কেশব চন্দ্র সেন বিয়ে করেছিলেন ন বছরের বালিকাকে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর বিয়ে করেছিলেন ৮ বছরের বালিকাকে। ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ৮ বছরের দীনময়ী দেবীকে বিয়ে করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর বিয়ে করেছিলেন সাত বছরের বালিকাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর 6 বছরের সারদা দেবীকে বিয়ে করেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম বিয়ে করেছিলেন পাঁচ বছরের বালিকা মোহিনী কে। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 11 বছরের বালিকাকে বিয়ে করেছিলেন।
তাহলে আমরা দেখলাম মাত্র 100 বছর আগের মনীষীরা কত কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে করে ঘর সংসার করেছেন।অথচ সেটা নিয়ে বুদ্ধিজীবীরা সমালোচনা করেন না। একই কাজের কারণে 100 বছর আগের মনীষীরা যদি সমালোচিত না হন তাহলে দেড় হাজার বছর আগের নবীকে কোন স্পর্ধায় সমালোচনা করা যেতে পারে?
ইসলাম সম্পর্কে এবং ইসলামের নবী সম্পর্কে সীমাহীন অজ্ঞতা আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের ইসলামবিদ্বেষের অন্যতম কারণ। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা দূর করতে না পারলে নুপুর শর্মারা ইসলামবিদ্বেষ কাটিয়ে উঠতে পারবে না।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!