খিস্তির কালচার, খিস্তির রাজনীতি বাঙালি মেনে নেয় না
অনির্বাণ চৌধুরী
রোদ্দুর রায়….মূলত তাঁর নামটা সোশ্যাল মিডিয়ায় এসেছে প্রকাশ্যে খিস্তি করার অদ্ভুত একটা রোগের প্রাদুর্ভাবে। রবীন্দ্রনাথ দিয়ে শুরু। ওঁরই একটা ইন্টারভিউতে (হয়তো আগে নেওয়া হয়েছিল) দেখলাম, রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে ওঁর কীর্তির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে উনি বলেছেন ,কপিরাইট উঠে গেছে,অতএব এই ধরণের পরীক্ষা নাকি করাই যায়। পাশাপাশি বলেছেন ,সবাই নাকি রবীন্দ্রনাথের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে ( ‘বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে’ এই শব্দবন্ধ উনি ব্যবহার করেননি,যথারীতি নোংরা ভাষা ব্যবহার করেছেন) । অর্থাৎ যুক্তিটা হলো এই, সবাই বারোটা বাজালে গানের কথায় কুৎসিত কদর্য ভাষা ব্যবহার করাই যায় ! সেটাই নাকি পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
বহু প্রতিবাদী জীবনের কথা পড়েছি,অনেককে দেখেছি। শিখেছি, রোমাঞ্চিত হয়েছি দুঃসাহসিক প্রতিবাদ কাকে বলে,সেটা দেখে।কিন্তু এমন সোশ্যাল মিডিয়া পোষিত খিস্তিবাজ গৃহবিপ্লবী বিরল। উনি ওই ইন্টারভিউতে বলেছেন, ভাষা একটা flow, রবীন্দ্রনাথের ভাষা আজ পাল্টে গেছে। যুক্তিটা এমন ,ভাষা পাল্টে গেছে বলে যে কারো সৃষ্টিতে স্ল্যাং ব্যবহার করা যায় ! রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী অব্দি….রোদ্দুরের খিস্তিযাত্রা। গণতান্ত্রিক দেশ। সেখানে প্রতিবাদ হতেই পারে। তার রাজনৈতিক যুক্তি,তথ্য থাকবে। কাউকে ব্যক্তিগত স্তরে অশালীন ভাষা প্রয়োগ করে অর্থাৎ খিস্তি বিক্রি করে পাবলিসিটি কেনা যায় কিন্তু তাকে প্রতিবাদ বলে না।অনেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার মন্তব্য উদ্ধৃত করে বলছেন,তাঁদের কুভাষা প্রয়োগ করে যদি শাস্তি না হয়,তাহলে রোদ্দুর রায়ের ক্ষেত্রে হবে কেন ? অদ্ভুত যুক্তি।
কোনো রাজনৈতিক নেতা যদি কুভাষা প্রয়োগ করেন ,তাঁর নিন্দে হোক,শাস্তি দাবি করা হোক কিন্তু সেগুলোকে দিয়ে রোদ্দুরকে ‘অমলকান্তি’ সাজিয়ে দেওয়ার মধ্যে একটা অভিনবত্ব থাকতে পারে কিন্তু তাতে আসলেই একটা সামাজিক দূষণ সৃষ্টিকারী জীবকে প্রশ্রয় দেওয়া ছাড়া মহৎ কিছু হয় না। এই ধরুন যদি এই রোদ্দুর বামপন্থী কোনো নেতার বাপ-চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করেন (যিনি রবি ঠাকুরকেও ছাড়েন না,তিনি যার তার বাপ-মা তুলতেই পারেন) তাহলে কি বামেরা তাঁকে ছাড়বেন ? যদি বিজেপি,কংগ্রেস,নকশালদের কোনো নেতাকে নোংরা ভাষা প্রয়োগ করেন, তাহলে তাঁরা কি তাঁকে ছেড়ে দেবেন ?
আসলে এই রোদ্দুর রায় খিস্তি ইনভেস্ট করে পাবলিসিটি গেইন করা এলিমেন্ট। সোশ্যাল মিডিয়ার ছায়াচ্ছন্নতায় বসে সস্তায় বিপ্লবীয়ানা করতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার।তাঁকে যাঁরা প্রতিবাদের অন্যতম প্রোটাগনিস্ট হিসেবে জাস্টিফাই করছেন, তাঁরা একটা সামাজিক দূষণকেই প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এমনিতে তো সামাজিক ব্যাধিতে ছেয়ে গেছে এ সমাজ,তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হোক কিন্তু নতুন করে আর একটা ব্যাধির কীটকে বাড়তে সাহায্য করবেন না। যাঁরা তাঁকে সমর্থন করছেন,তাঁরা ভেবে দেখবেন।তাঁকে অনেক আগেই গ্রেফতার করা উচিত ছিল। দেরিতে হলেও যে কাজটা হয়েছে,এটাই আশার কথা।