শিয়রে শমন, সরকার সব জানে
অর্ণব রায়
শিয়রে শমন, সরকার জানে পৃথিবীসুদ্ধু সবকিছু এক দানবীয় ধূমকেতুর সাথে ধাক্কা লেগে ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু তবুও লোভ লোভ আর লোভের চক্করে সেই ধূমকেতু থেকে দামি ধাতু বের করার ধান্দায় এক ধনী ব্যবসায়ীর হাতে বিকিয়ে গেছে সরকার। তাতে পাব্লিক বাঁচলো না মরলো সেটা নিয়ে মিডিয়া বা দেশের সরকার – কারও বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই। ভয় দেখিয়ে বা না না রকম লোভের চক্করে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেইসব বিজ্ঞানীদেরও, যাঁরা এই বিপদের কথা প্রথম বলেছলেন। এমনকি সেই ধূমকেতু যখন পৃথিবীর আকাশে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে, যখন কোনো সন্দেহের আর অবকাশ নেই যে মহাপ্রলয় আসন্ন….. তখনও অবধি টিভিতে লাস্যময়ী ঘোষিকা বলে চলেছেন….’ডোন্ট লুক আপ’….ওপরে দেখবেন না।
সচেতন পাঠক নিশ্চই এতক্ষনে বুঝে গেছেন কোন ছবির কথা বলছি। হ্যাঁ, এডাম ম্যাকে পরিচালিত ছবি ‘ডোন্ট লুক আপ’।এই ডিসেম্বরেই মুক্তি পেয়েছে নেটফলিক্সে। না দেখলে দেখে ফেলুন এক্ষুনি! এমন দুর্দান্ত ‘ডার্ক পলিটিক্যাল স্যাটায়ার’ ধর্মী ছবি বহুদিন দেখেননি একথা ছবিটা দেখে নিঃসন্দেহে বলবেন।
‘ডুমসডে ফ্যান্টাসি’ শৈলীর হলিউডি ছবিগুলিতে আমেরিকাকে সাধারণত দেখানো হয় মানবজাতির রক্ষাকর্তা হিসেবে, কিন্তু এই ছবির পরিচালক সম্পূর্ণ উলটো পথে হেঁটেছেন। তীব্র শ্লেষ মেশা ডার্ক হিউমার নানা দৃশ্যে ও সংলাপে ব্যবহার করে বার বার দেখিয়েছেন যে সরকার থেকে সেনাবাহিনী সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে আসলে পুঁজিই। রাজনীতির কুশীলব থেকে মিডিয়া বা উচ্চ সরকারি পদাধিকারী- সবাই বৃহৎ পুঁজিরই দাসত্ত্ব করে। তাঁরা সচেতন ভাবেই সাধারণ মানুষকে মিথ্যে বলে, তাঁদের বোকা বানায়।
সিনেমায় যৌনতা একটি বহুল ব্যবহৃত বিষয়। কিন্তু এই ছবিতে যৌনতাকেও ব্যবহার করা হয়েছে কখনো দুটি মানুষের মধ্যেকার সামাজিক অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিত বোঝাতে, আবার কখনো ডুবন্ত মানুষের খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মত বীভৎস বাস্তবকে ভুলে যাবার তীব্র তাড়না বোঝাতে। এই ছবিতে যৌনতা আছে, কিন্তু নগ্নতা নেই- উল্টে এই ছবি যেন নগ্ন করে দিয়েছে ক্ষমতা আর অর্থের মিথ্যে অহংকারের অন্ধকারকেই।
আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ দিকও তুলে ধরেছেন পরিচালক, তিনি দেখিয়েছেন যে টেকনোলজি যতই উন্নত হোক, বিজ্ঞানের যতই জয় জয়কার হোক…. মানুষের মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে গেলে, মানবজাতির ধ্বংস নিশ্চিত।
ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, মেরিল স্ট্রিপ, জেনিফার লরেন্স, আরিয়ানা গ্রান্ডে, জোনা হিল, হিমেশ পাটেলের মত দুর্দান্ত অভিনেতারা। এই ছবিতে লিওনার্দোর মত অভিনেতা থাকলেও তাঁকেও যেন ছাপিয়ে গেছেন মেরিল। কে বলবে তাঁর বয়স বাহাত্তর! আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি। তাঁর চরিত্রে ছায়া ফেলেছেন মার্কিন রাজনীতির এক বাস্তব চরিত্র। না, কার চরিত্র তা বলব না। সব বললে তো ছবি দেখার মজাই নষ্ট। তাই আপাতত কলম, থুড়ি কীবোর্ডকে ছুটি দিলাম। আপনারাও বছর শেষের পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা ছুটির দুপুরগুলি ঘুমিয়ে নষ্ট না করে টুক করে দেখে ফেলুন দুঘন্টা পঁচিশ মিনিটের ছবিটি।
লেখা- অর্ণব রায়